স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পরে এবার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি নিয়েও তৈরি হয়েছে টানটান উত্তেজনা। ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই রায় ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রাখবে কি না, তা নিয়ে এখন চলছে জল্পনা। আজ অর্থাত্ সোমবার এই মামলার শুনানি হতে চলেছে হাই কোর্টের নতুন ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্র শুনানি করবেন।
২০১৪ সালের TET পরীক্ষায় দুর্নীতি
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার মাধ্যমে। সেই টেটের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ শুরু হয়। পরে সামনে আসে দুর্নীতির অভিযোগ। প্রায় ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী মামলা করেন হাইকোর্টে। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিয়োগ হয়েছে, সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি এবং নিয়োগের নিয়মও ভাঙা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১২ মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায় দেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি বাতিল হবে। ফলে প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষক চাকরি হারান।
আজ ৩২ হাজার চাকরির ভাগ্য নির্ধারণ
তবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে পর্ষদ ডিভিশন বেঞ্চে যায়। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়, তবে নির্দেশ দেয় নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নির্দেশও রাজ্য এবং পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে। পরে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ডিভিশন বেঞ্চকে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে রায় দিতে হবে। কিন্তু নানা কারণে মামলা ঝুলে ছিল এতদিন। সম্প্রতি মামলাটি বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র বেঞ্চে উঠলেও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিচারপতি সেন মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলাটি যায় নতুন ডিভিশন বেঞ্চে, যেখানে সোমবার থেকে শুনানি শুরু হবে।
ওএমআর শিটও সংরক্ষণ করা হয়নি
মামলাকারীদের আইনজীবীরা মনে করছেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের মতো প্রাথমিক শিক্ষকের ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে এবং শেষমেশ সিঙ্গল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের রায়ই বহাল থাকবে। তাঁদের বক্তব্য, এখানে অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি, সংরক্ষণ নীতি লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং পুরো প্যানেল প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি, ওএমআর শিটও সংরক্ষণ করা হয়নি, যা SSC মামলার ক্ষেত্রেও একটি বড় কারণ ছিল চাকরি বাতিলের।
প্রাথমিক নিয়োগের দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই। তদন্তে উঠে এসেছে, নম্বরের কারচুপি করে অনেক অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ফলে যোগ্য এবং অযোগ্যদের আলাদা করা এখন কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পর্ষদ দাবি করছে, ওএমআর শিট স্ক্যান করে নথিভুক্ত করা হয়েছিল, তবে সেই স্ক্যানের সত্যতা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। ফলে ৩২ হাজার চাকরির ভবিষ্যত এখন পুরোপুরি ডিভিশন বেঞ্চের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
এখন দেখার, সোমবার থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চ কী সিদ্ধান্ত নেয়। চাকরি হারাবেন কি না ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক, তার দিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।