
যোগ্য চাকরিহারাদের নবান্ন অভিযান ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল পরিস্থিতি। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধস্তাধস্তি হয় আন্দোলনকারীদের। সকাল থেকেই হাওড়ার যে চারটি পথ দিয়ে মিছিল আসার কথা ছিল, সেই সমস্ত রাস্তায় ব্যারিকেড লাগিয়ে দেয় পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা চত্বর। এদিন ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা করেছেন মিছিলকারীরা। তার ফলে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান চাকরিহারারা। ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। অবশেষে মেলে ছাড়পত্র। মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেন ১৮ জন ‘যোগ্য’ শিক্ষক এবং ২ জন ‘যোগ্য’ অশিক্ষক কর্মী-সহ ২০ জন। তবে মুখ্যসচিবের সঙ্গে এদিনের বৈঠকে সন্তুষ্ট নন চাকরিহারারা। আজ অর্থাৎ সোমবারই যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এমনই দাবি করেছেন চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা। রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, তালিকা না পেলে রাস্তাতেই থাকবেন আন্দোলনকারীরা।
মেহবুব মণ্ডল, চিন্ময় মণ্ডল-সহ আন্দোলনকারী চাকরিহারাদের দাবি, রাতের মধ্যে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতেই হবে। তাঁদের প্রশ্ন, 'তালিকা প্রকাশের নির্দেশ যেমন দেওয়া হয়নি। তেমনই প্রকাশে নিষেধাজ্ঞাও নেই। তাহলে কেন তালিকা তৈরি থাকা সত্ত্বেও দেওয়া হচ্ছে না?'
শিবপুর পুলিশ লাইন্সে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক হয় চাকরিহারাদের ২০ জনের প্রতিনিধির। নবান্ন নয়, শিবপুর পুলিশ লাইনে সরকার-চাকরিহারাদের এই বৈঠক হয়। তবে বৈঠকের মাঝপথেই বেরিয়ে যান মুখ্যসচিব। ১০ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে যান তিনি। তবে বৈঠকে সরকারের তরফে উচ্চ পদস্থ আধিকারীকরা উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যসচিবের সঙ্গে এদিনের বৈঠক নিয়ে একেবারেই সন্তুষ্ট নন চাকরিহারারা। আজ রাতের মধ্যেই ওএমআর শিট প্রকাশের দাবিতে তাঁরা অনড়। সেইসঙ্গে নতুন করে পরীক্ষায় তাঁরা বসবেন না তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কেন দাগিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে সরকার, সেই প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈঠকে মুখ্যসচিব ছাড়াও শিক্ষাসচিব ছিলেন। এই বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি যোগ দিয়েছিলেন। মুখ্য সচিব এবং ডিজি দুজনেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার। আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে সরকারের অবস্থান কি তা জানতে চান প্রতিনিধিরা। কিন্তু, আলোচনা সদর্থক হয়নি। প্রসঙ্গত, সোমবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-র আন্দোলনকারীরা।
চাকরিহারাদের স্পষ্ট দাবি, যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাও বিনা পরীক্ষায়। পুনরায় পরীক্ষা তাঁরা দিতে চান না। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেলাগাম দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। তবে যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে তারা সকলেই যে সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এমনটা বলেনি শীর্ষ আদালত। তবে যাদের বিরুদ্ধে প্যানেল বহির্ভূত, নিয়োগ, সাদা ওএমআর শিট জমা দিয়ে চাকরি বা রেঙ্ক জাম্প করে চাকরির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এদের ‘দাগি’ ঘোষণা করে চাকরি বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে মাইনে ফেরতেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাতিল বলে গন্য হবে। একইসঙ্গে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কমিশনের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিতে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে, যা চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে। সিঙ্গল বেঞ্চ সেই যুক্তিকে মান্যতা দিয়ে অযোগ্য দাগিদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। পরে ডিভিশন বেঞ্চেও সেই রায় বহাল থাকে। এদিন চাকরিহারারাও অভিযোগ করেন রাজ্য সরকার দাগি দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে তাদের বিপদে ফেলছে। অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা পেশ করে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।