পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, তা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসনে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
এই দুর্নীতির জেরে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ প্রায় ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয়।
আদালত জানায়, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদসহ বেতন ফেরত দিতে হবে ।
এই রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও চাকরি হারানো শিক্ষকরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০২৪ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেয়, যা পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত বহাল থাকবে । আদালত নির্দেশ দেয়, সিবিআইকে তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের রায় ছিল, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদসহ বেতন ফেরত দিতে হবে। এই রায়ের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও চাকরি হারানো শিক্ষকরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।
চাকরি হারানো শিক্ষকরা রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। তাঁরা প্রতিবাদ জানান, দাবি করেন যে তাঁদের নিয়োগে কোনও অনিয়ম হয়নি ।
কলকাতার শহিদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অনশন ভাঙেন।
এই দুর্নীতির মামলায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শিক্ষা দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জেলে আছেন। তদন্তে তাঁদের এক সহযোগীর ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও গয়না উদ্ধার হয় । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক করে চিহ্নিত করতে হবে। আদালত জানায়, যদি এটি সম্ভব হয়, তবে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল না করে শুধুমাত্র অযোগ্যদের চাকরি বাতিল করা উচিত । এই ঘটনাপ্রবাহ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। চূড়ান্ত রায়ের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে, যা রাজ্যের শিক্ষা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।