ফ্যাক্ট চেক: ইরানে গ্রেফতার মোসাদের চর? না, ভাইরাল দু'টি ভিডিও ভিন্ন ঘটনার

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রথম ভিডিওটি ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর আধিকারিকদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওটি ইজরায়েলের উপর ইরানের হামলা উদযাপনের অভিযোগে ইজরায়েলের কারাগারে বন্দি প্যালেস্টাইনদের মারধরের দৃশ্য।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: ইরানে গ্রেফতার মোসাদের চর? না, ভাইরাল দু'টি ভিডিও ভিন্ন ঘটনার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সোমবার গভীর রাতে কার্যকর হয়েছে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। আর এর একদিন পরেই অর্থাৎ বুধবার ই‌জরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের চর সন্দেহে একসঙ্গে তিন ব্যক্তিকে ফাঁসি দিল আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের দেশ। অন্যদিকে মোসাদ তথা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে কমপক্ষে আরও ৭০০ জনকে। আর এই সার্বিক পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত তথাকথিত দুটি ভিডিও। 

যেখানে প্রথম ভিডিওতে একটি ঘরের মধ্যে পিছনে হাত বাঁধা অবস্থায় কয়েকজন ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের পরিচয় দিতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওতে কয়েকজন সশস্ত্র সেনা সদস্যকে একটি কারাগরের ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে বন্দি থাকা কিছু ব্যক্তিকে হাত ও চোখ বেঁধে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। উভয় ভিডিওই শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলি ইরানি সেনাবাহিনীর তরফে সেদেশে লুকিয়ে থাকা মোসাদের চরদের গ্রেফতার করার দৃশ্য। 

উদাহরণস্বরূপ, প্রথম ভিডিওটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ইরানে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ইহুদি এজেন্টদের গ্রেপ্তার করেছে! তারা তেহরানের কাছে একটি গোপন ভূগর্ভস্থ ই'সরাইলি ড্রোন কারখানা আবিষ্কার করা হয়েছিল যা ইরানি নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করেছে। ফাঁসি দেওয়া হবে।”

অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওটি শেয়ার করে অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,  “ইরানের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ইসরায়েলের এজেন্ট মোসাদের গোয়েন্দা ইহুদি ঘাটি ইরানের দখলে আটক গোয়েন্দা এজেন্ট।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রথম ভিডিওটি ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর আধিকারিকদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওটি ইজরায়েলের উপর ইরানের হামলা উদযাপনের অভিযোগে ইজরায়েলের কারাগারে বন্দি প্যালেস্টাইনদের মারধরের দৃশ্য।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

প্রথম ভিডিও: প্রথম ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করার সময় আমরা সেটির ফ্রেমের উপর তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির লোগো দেখতে পাই। এরপর উক্ত সূত্র ধরে ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ এবং এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে ২০২৬ সালের ১৭ জুলাই আনাদোলু এজেন্সির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই একই ভিডিওর একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেটি তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার সেনাবাহিনীর আধিকারিকদের দেশটির আঙ্কারা পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী শাখার তরফে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য।

Advertisement

এরপর উক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে একাধিক অন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেইসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রেসেপ তাইপ এরদোগান এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর একটি অংশ অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয় এরদোগান এবং তাঁর সরকার। তবে অভ্যুত্থানে জড়িত সন্দেহে আড়াই হাজারেরও বেশি সেনা সদস্যকে আটক করে এরদোগান প্রশাসন।

দ্বিতীয় ভিডিও: এরপর দ্বিতীয় সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৬ জুন তুরস্কের সরকারি সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবালের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইজরায়েলের উপর ইরানের হামলা উদযাপনের অভিযোগে ইজরায়েলের কারাগারে বন্দি প্যালেস্টাইনদের মারধর করে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। 



এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে চলতি বছরের ১৬ জুন এই একই ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি ইরান ইজরায়েলের উপর হামলা চালালে ইজরায়েলের কারাগারে বন্দি প্যালেস্টাইনের নাগরিকরা তা উদযাপন করে। ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারলে তারা প্রথমে কারাগর কক্ষে কাঁদানে গ্যাস দেয় এবং এরপর প্যালেস্টাইনের বন্দিদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। চলতি বছরের ১৭ জুন The Palestine Chronicle-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও এই একই ভিডিও-সহ একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইরানে লুকিয়ে থাকা মোসাদের চরদের গ্রেফতার করার দৃশ্য দাবি করে ছড়ানো হচ্ছে পুরনো এবং অসম্পর্কিত ভিডিও।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook users

দাবি

ভিডিও দুটিতে ইরানি সেনাবাহিনীর হাতে সেদেশে লুকিয়ে থাকা মোসাদের চরদের গ্রেফতার হওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

ফলাফল

প্রথম ভিডিওটি ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার সেনা আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভিডিওটি ইজরায়েলের কারাগারে বন্দি প্যালেস্টাইনদের মারধরের দৃশ্য।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement