
সম্প্রতি সোশ্য়াল মিডিয়ায় আগুন লাগার একটি ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, ভারতে নাকি এভাবেই মসজিদ-মাদ্রাসায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ভিডিওতে একটি এলাকায় মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করে অনেকেই লিখছেন যে এখানে ভারতে মসজিদ-মাদ্রাসা পোড়াতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পোস্ট করে কেউ কেউ লিখেছেন, "ভারতে আবারও মসজিদ মাদ্রাসা পুড়িয়ে দিয়েছে মোদী সরকার প্রায় ২০০টির ও বেশি #MOSJID #BJP4IND #muslim."
কেউ আবার একই ভিডিও পোস্ট করে লিখছেন, "ভারতে আবারো মসজিদ মাদ্রাসা পুড়িয়ে দিচ্ছে উগ্রবাদী মোদি বাহিনী।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল দাবিটি সঠিক নয়। এই ভিডিওটি প্রায় দু'বছর আগেকার এবং পাকিস্তানের একটি বাজারে আগুন লাগার দৃশ্য।এর সঙ্গে ভারতের কোনও সম্পর্ক নেই।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটির উপর উর্দু হরফে কিছু শব্দ লেখা দেখা যাচ্ছে। এই শব্দগুলিকে গুগল লেন্সের মাধ্যমে অনুবাদ করে দেখা যায়, উর্দুতে 'আয়ুব রোড খানেওয়াল' লেখা রয়েছে। এর থেকে অনুমান করা যায় যে ভিডিওটি খানেওয়াল নামের কোনও এলাকার আয়ুব নামক রোডের হতে পারে।
কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে জানা যায়, পাকিস্তানে খানেওয়াল নামে এলাকায় একটি আয়ুব রোড রয়েছে। এখানে সম্প্রতি বা বিগত কয়েক বছরে এই ধরনের কোনও আগুন লেগেছে কিনা জানতে এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করা হয়। তখন একটি পাকিস্তানি ফেসবুক পেজে ওই একই জায়গায় আগুন লাগার একটি অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ভিডিও পাওয়া যায়।
২০২৩ সালের ৪ মে ওই ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছিল, ওই দিন খানেওয়ালের আয়ুব রোডে পিপল মসজিদের নিকটস্থ দোকানগুলিতে বিকেল ৫টা ১০ নাগাদ আচমকা আগুন লেগে যায়। বিক্রির জন্য দোকানগুলিতে আতশবাজি মজুত করে রাখার কারণে আগুন আরও দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
২০২৩ সালের এই ভিডিওতে যে অগ্নিকাণ্ড দেখা গিয়েছে, সেই ঘটনা আর ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ঘটনা একই দিনের কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে উর্দু ভাষায় কিছু কিওয়ার্ড দিয়ে এই ঘটনার বিষয়ে সার্চ করা হয়। তখন ২০২৩ সালের ৪ মে উর্দু ভাষার ক্যাপশন-সহ পোস্ট করা ওই অগ্নিকাণ্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
এই ভিডিও-র ৩৬ সেকন্ডের পরবর্তী অংশে এক ব্যক্তিকে ফেজটুপি পরিহিত অবস্থায় ঘিয়ে রঙের কুর্তা ও হালকা কমলা রঙের প্লাস্টিক থলে হাতে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ওই একই ব্যক্তিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে একই পোশাকে ওই একই থলে হাতে দেখা যাবে। যা থেকে বুঝতে বাকি থাকে না যে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আসলে ২০২৩ সালের মে মাসের এবং এটি পাকিস্তানের ঘটনা।
দুনিয়া নিউজ নামে একটি পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমেও ২০২৩ সালের ৫ মে এই বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করা হয়। সেই খবরে লেখা হয়, এই বাজারে আগেও একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিল। এ বারের আগুনে বাজারের বেশিরভাগ দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এ ছাড়াও আমরা গুগল ম্যাপে খানেওয়ালের আয়ুব রোডে ওই মসজিদটি খুঁজে পাই যার নাম পিপল ওয়ালি মসজিদ। গুগল ম্যাপে থাকা মসজিদের ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা মসজিদের মিনারের তুলনা করলে আর কোনও সংশয় থাকে না।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে যে পাকিস্তানের একটি পুরনো এবং অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও মিথ্যে দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ভারতে কীভাবে মসজিদ-মাদ্রায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটি পাকিস্তানের খানেওয়াল এলাকার আয়ুব রোডের। ২০২৩ সালের ৪ মে এখানে পিপল মসজিদের নিকটস্থ বাজারে আগুন লেগেছিল।