ফ্যাক্ট চেক: বিক্ষোভকারীদের সামনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ‘হাতজোড়’? না, ভিডিওটি ত্রিপুরার

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার কৈলাশহর থানার কুবজার এলাকায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ডাকা বিক্ষোভ বন্ধের অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে দুই পুলিশ আধিকারিককে।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: বিক্ষোভকারীদের সামনে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ‘হাতজোড়’? না, ভিডিওটি ত্রিপুরার

মুর্শিদাবাদ হিংসার অবহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কোনও একটি স্থানে দুই পুলিশ আধিকারিককে মাথায় ফেজ টুপি পরা কিছু মানুষের সামনে হাতজোড় করে তাদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় বিএসএফ মোতায়েনের পর পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের সামনে কেবল হাতজোড় করে অনুরোধ করছে। অথচ এই পুলিশই আন্দোলনকারী শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জ করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমে যেতে এখন পুলিশ এদের কাছে হাত জোড় করে ঘর পাঠাচ্ছে যাতে বিএসএফ বা সিআরপিএফ কোন ভয়ঙ্কর রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে না পাঠাতে পারে। তার আগে অব্দি খুলা ছুট দিয়ে রাখা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে ? কি অবস্থা.... পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের এদের কাছে হাতজোড়ো করে বলছে আর শিক্ষকদের বেলায় ডান্ডা নিয়ে তেড়ে যাচ্ছে।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার কৈলাশহর থানার কুবজার এলাকায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ডাকা বিক্ষোভ বন্ধের অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে দুই পুলিশ আধিকারিককে।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, ভাইরাল ভিডিওটি সন্দেহজনক। কারণ ভিডিওটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের পোশাকের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পোশাকের বেশকিছু পার্থক্য আমাদের চোখে পড়ে। পাশাপাশি ভিডিওতে দুই পুলিশ আধিকারিক যে বাংলা উপভাষায় কথা বলছেন তা পশ্চিমবঙ্গের নয় বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে ভিডিওর কমেন্ট সেকশন খতিয়ে দেখলে আমরা লক্ষ্য করি একাধিক ব্যক্তি ভিডিওটিকে পশ্চিমবঙ্গের নয় বরং ত্রিপুরার বলে উল্লেখ করেছেন। 

এরপর উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালালে আমরা একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার ঊনোকোটি জেলার কৈলাশহর থানার টিলাবাজার থেকে কুবঝার এলাকায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই মিছিলের এক পর্যয়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে তাদেরকে বাঁধা দেওয়া হয়। তখন তারা পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় দুই পুলিশ আধিকারিক আহত হন। 

Advertisement

এরপর উক্ত সূত্র ধরে ভাইরাল ভিডিওটি ত্রিপুরার কৈলাশহরের হতে পারে সেই অনুমান থেকে আমরা এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড ও রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা গত ১২ এপ্রিল ‘আমার ত্রিপুরা’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পাই। অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা সেই ভিডিওর ৯ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের সঙ্গে আমরা ভাইরাল ভিডিওর মিল খুঁজে পাই। অর্থাৎ উভয় ভিডিওতে আমরা একই পুলিশ আধিকারিক ও অন্দোলনকারীদের একই ভাবে একই পোশাকে দেখতে পাই। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিও এবং ‘আমার ত্রিপুরা’ নামত ফেসবুক পেজে প্রাপ্ত ভিডিওটি একই স্থানে ও একই ঘটনার সময় তোলা হয়েছিল।

এরপর ভিডিওটির আসল রহস্য এবং সেখানে উপস্থিত দুই পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তা জানতে আমরা ‘আমার ত্রিপুরা’ নামক ফেসবুক পেজটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন ওই পেজের মালিক তথা ত্রিপুরার সাংবাদিক আব্দুল সামাদ আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি গত ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার ঊনোকোটি জেলার কৈলাশহর থানার কুবজার এলাকায় তোলা হয়েছিল। ওইদিন কুবজার এলাকায় ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা একটি বিক্ষোভের আয়োজন করেন। সেই বিক্ষোভের এক পর্যয়ে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন তাদের বিক্ষোভ বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন ইরানি থানার ওসি অরুণউদয় দাস এবং কৈলাশহরের ডিএসপি উৎপলেন্দু দেবনাথ। আমি নিজে ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। ভিডিওর শুরুতে পুলিশের পাশে লাল পোশাক পরে আমি এই বিক্ষোভের খবর কভার করছিলাম।”

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা ভাইরাল ভিডিওটি-সহ ইরানি থানার ওসি অরুণউদয় দাস এবং কৈলাশহরের ডিএসপি উৎপলেন্দু দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা উভয়ই ভাইরাল ভিডিওটি ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার কৈলাশহরের কুবজার এলাকার ঘটনা বলে আমাদের জানিয়েছেন। ডিএসপি উৎপলেন্দু দেবনাথ আমাদের বলেন, “বিক্ষোভ চলাকালীন কুবজার এলাকায় বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। এর ফলে আমি-সহ মোট তিনজন পুলিশ আধিকারিক আহত হয়ে পড়ি। এরপর এক পর্যয়ে বাধ্য হয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। তখন বেশিরভাগ বিক্ষোভকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও কিছু মানুষ একটি জায়গায় জটলা পাকাচ্ছিল। তখন তাদেরই একজন নেতার দাবিতে আমরা বিক্ষোভকারীদেরকে বিক্ষোভ বন্ধ করে বাড়ি চলে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলাম।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ত্রিপুরার কৈলাশহরের ভিডিওর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সম্পর্ক জুড়ে মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ভিডিওতে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় বিএসএফ মোতায়েনের পর পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের সামনে হাতজোড় করে অনুরোধ করতে দেখা যাচ্ছে।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার কৈলাশহর থানার কুবজার এলাকায় তোলা হয়েছিল এবং সেখানে উপস্থিত দুই পুলিশ আধিকারিকই ত্রিপুরা পুলিশে কর্মরত।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement