জঙ্গি হামলায় ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে দু'দিনে দু'রকম মন্তব্য বিতানের স্ত্রী সোহিনীর? রইল পুরো ঘটনা 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক সোহিনীর সঙ্গে জ়ি ২৪ ঘণ্টা এবং বঙ্গ বিজেপি নেতাবৃন্দ তথা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথোপকথন খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছে যে ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে দু'দিনে দু'রকমের বক্তব্যের দাবিটি পুরোপুরি সত্যি নয়। জ়ি ২৪ ঘণ্টার আসল ক্লিপের প্রথম অংশটি ছেঁটে ফেলে বাদবাকি অংশ পোস্ট করার কারণে এই বিভ্রান্তি বাড়ছে। 

Advertisement
জঙ্গি হামলায় ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে দু'দিনে দু'রকম মন্তব্য বিতানের স্ত্রী সোহিনীর? রইল পুরো ঘটনা 

পহেলগামের জঙ্গি হামলায় নিহত কলকাতার বাসিন্দা বিতান অধিকারীর স্ত্রী'র দুটি ভিডিও-র একটি কোলাজ সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করেছে। এই কোলাজটি ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, জঙ্গি হামলায় ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে দু'দিনে পৃথক বা দু'ধরনের মন্তব্য করেছেন বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী রায়। 

কোলাজে থাকা প্রথম ভিডিওটি জ়ি ২৪ ঘণ্টায় ফোনে নেওয়া একটি সাক্ষাৎকার শোনা যাচ্ছে। সেই ভিডিও-র কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো। 

"সঞ্চালক: মানে যারা হিন্দুরা আলাদা হয়ে গেল তাদের দিকে চালিয়ে দিলো!
সোহিনী: না হিন্দু তখন আলাদা হয়নি সবাই তখন চুপচাপ ছিল। কেউ হিন্দু মুসলিম কেউ কিছু বলেনি। শুধু মেরে দিলো, গুলি মেরে দিলো আর কিচ্ছু না। 
সঞ্চালক: আপনার বাচ্চাও সঙ্গে রয়েছে তো?
সোহিনী: আমার বাচ্চা সাথে আছে। 
সঞ্চালক: মানে আপনারা কোনও রকমে পালাতে পেরেছিলেন, দাদা বোধহয় পারলেন না। 
সোহিনী: নাহ্। পারেনি। ওকে অনস্পট মেরে দিয়েছে।"

কোলাজে থাকা দ্বিতীয় ভিডিওটিতে কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সোহিনীকে সাক্ষাৎ করতে দেখা গিয়েছে। এখানে যেহেতু শুধুমাত্র সোহিনীর বক্তব্য নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তাই আমরা দু'জনের কথোপকথনের মধ্যে কেবল তাঁর বক্তব্য হুবহু এখানে তুলে ধরছি। শুভেন্দু অধিকারীর নয়। পিয়ালী ছেলেকে দেখিয়ে বলছেন, "পাপা শেষ। এভাবে বলছে। ওর চোখের সামনে ওর বাবাকে মেরে দিলো...আমার হাজবেন্ড বিজেপিকে খুব সাপোর্ট করতো স্যর। আমি শুধু আমার ভরসায় এসেছি স্যর। আমার হাজবেন্ড আপনাদের খুব মানতো স্যর, বিজেপিকে খুব মানতো, আমাতে হেল্প করুন।" 

প্রাথমিকভাবে জ়ি ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে, ও পরে কলকাতা ফিরে আসার পর শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এই কথোপথনকে ভিত্তি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে যে সোহিনী জঙ্গি হামলায় ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে দু'দিনে দুরকম বক্তব্য দিয়েছেন। পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পাশাপাশি দুটি ভিডিও রাখলাম! দুটি বক্তব্যই পেহেলগাওতে সন্ত্রাসবাদি হামলায় নিহত টালিগঞ্জের বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী রায়ের! প্রথমটি ঘটনার দিন Zee 24 Ghanta কে দেওয়া এবং দ্বিতীয়টি গতকাল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সহ বঙ্গবিজেপি নেতানেত্রীদের সাথে কলকাতা বিমানবন্দরে ওনার বার্তালাপ! আক্রমণের ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে পরস্পর দুদিনে দু ধরনের বক্তব্য পাবেন।"

Advertisement

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক সোহিনীর সঙ্গে জ়ি ২৪ ঘণ্টা এবং বঙ্গ বিজেপি নেতাবৃন্দ তথা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথোপকথন খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছে যে ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে দু'দিনে দু'রকমের বক্তব্যের দাবিটি পুরোপুরি সত্যি নয়। জ়ি ২৪ ঘণ্টার আসল ক্লিপের প্রথম অংশটি ছেঁটে ফেলে বাদবাকি অংশ পোস্ট করার কারণে এই বিভ্রান্তি বাড়ছে। 

আসল ভিডিওতে কী বলেছিলেন সোহিনী? 

বিতান অধিকারীর মৃত্যুর পর জ়ি ২৪ ঘণ্টা গত ২৩ এপ্রিল সোহিনীর ফোনে নেওয়া সাক্ষাৎকারটি নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিল। সেখানে সোহিনীর সঙ্গে প্রথম থেকে যা কথোপকথন হয়েছিল তা অবিকৃতভাবে তুলে ধরা হলো। 

"সোহিনী: আমরা ওইখানেই স্পটেই ছিলাম। এটা মিনি সুইৎজারল্যান্ডে হয়েছে। পহেলগামে। পহেলগামে। মিনি সুইৎজারল্যান্ডে হয়েছে। 
সঞ্চালক: হঠাৎ করে এসে গুলি চালিয়ে দিলো এ রকম করে? 
সোহিনী: হ্যাঁ, হঠাৎ করে এসে। 
সঞ্চালক: মানে আপনাদেরও কি পরিচয়পত্র দেখতে চাইলো?
সোহিনী: না না সে রকম এরা কিছুই বলেনি। শুধু বলেছে হিন্দু কে মুসলিম কে বলুন, আলাদা হয়ে যান মুসলিমরা। ব্যাস, ওই ওতটুকুই। তারপরেই ব়্যান্ডম গুলি চালিয়ে দিয়েছে। ব়্যান্ডম। 
সঞ্চালক: মানে যারা হিন্দুরা আলাদা হয়ে গেল তাদের দিকে চালিয়ে দিলো!
সোহিনী: না হিন্দু তখন আলাদা হয়নি সবাই তখন চুপচাপ ছিল। কেউ হিন্দু মুসলিম কেউ কিচ্ছু বলেনি। শুধু মেরে দিলো, গুলি মেরে দিলো আর কিচ্ছু না। 
সঞ্চালক: আপনার বাচ্চাও সঙ্গে রয়েছে তো?
সোহিনী: আমার বাচ্চা সাথে আছে। 
সঞ্চালক: মানে আপনারা কোনও রকমে পালাতে পেরেছিলেন, দাদা বোধহয় পারলেন না। 
সোহিনী: নাহ্। পারেনি। ওকে অনস্পট মেরে দিয়েছে।" 


জ়ি ২৪ ঘণ্টায় অফিসিয়ালি প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারের পুরো ভিডিওটি শুনলে পরিষ্কার হয়ে যায়, এর প্রথম অংশ বাদ দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে যেখানে সোহিনী জঙ্গিদের দ্বারা হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের কথা বলেছেন। শুধুমাত্র পরের অংশটি প্রচার করা হয়েছে, যেখানে হিন্দু-মুসলিম পর্যটকরা 'চুপ ছিল, কেউ কিছু বলেনি,' এই কথাটিকে জঙ্গি হামলায় ধর্মীয় অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে জোড়া হচ্ছে। 

অন্যদিকে, জঙ্গি হামলার পরদিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল বিতান অধিকারীর দেহ কলকাতায় পৌঁছলে বিমানবন্দরে বিজেপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোহিনী যখন সাক্ষাৎ করেন,  তখন তিনি বলেন, "আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, মুসলিম? আপনি কি কালেমা পড়তে জানেন! না, জানি না।" এই সাক্ষাতের পুরো ভিডিও এখানে দেখা যাবে। 

এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে জঙ্গি হামলায় ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল নিয়ে সোহিনীর দু'ধরনের মন্তব্যের দাবি জমি পাচ্ছে কারণ জ়ি ২৪ ঘণ্টার ভিডিও-র আসল অংশটি কেটে বাদ দিয়ে বাকি অংশ ভাইরাল করা হচ্ছে। যেখানে প্রথমেই সোহিনী পরিষ্কার বলেছিলেন যে জঙ্গিরা এসে হিন্দু-মুসলিম পৃথকীকরণ করেছিল। কিন্তু সেই অংশ বাদ দেওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে । 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পহেলগামে হামলায় ইসলামিক কলেমা পাঠ করায় প্রাণ রক্ষা পেয়েছে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবাশীষ ভট্টাচার্যর। এই বিষয়ে একাধিক বাংলা নিউজ রিপোর্ট এবং এনডিটিভি-তে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকার এখানে দেখা যাবে। 

POST A COMMENT
Advertisement